পহেলা বৈশাখে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বলী, বাউল উৎসব ও নকশিকাঁথায় জেগেছে বাঙালির ঐতিহ্য। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বাউল গানের আসর। কোথাও বলীখেলা, কোথাও পিঠাপুলির ধুম, কোথাও নকশিকাঁথায় তৈরি ছেলেমেয়েদের জামা, ফতুয়া ইত্যাদির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে বাংলা বর্ষবরণ।
উপজেলায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার পুরাতন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জমিতে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে।
ছোট, মাঝারি ও বড়দের বলীখেলায় মোট ৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে খেলায় অংশ নিতে আসেন প্রতিযোগীরা। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইছাখালী ইউনিয়নের আমিনবাজার এলাকার কামরুল বলী। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় তাকে ফ্রিজ উপহার দেওয়া হয়।
বলীখেলায় অংশ নেওয়া সানাউল করিম স্বপন বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে আসছি। মীরসরাই ছাড়াও সীতাকুণ্ড, ছাগলনাইয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত শতাধিক বলীখেলায় অংশ নিয়েছি। অনেক বছর পর আজ খেলায় অংশ নিয়ে বাইসাইকেল জিতলাম।
আনোয়ারা উপজেলা থেকে বলীখেলায় অংশ নিতে আসেন রাজন বলী বলেন, লালদীঘিতে জব্বারের বলীখেলায়ও অংশ নিয়েছি। এবার ইছাখালী টেকেরহাট এলাকায় আমিসহ চারজন এসেছি। কয়েকটিতে জয়ী হয়েছি। শেষবার স্বপন বলীর কাছে হেরে যাই।
টেকেরহাট বলীখেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, ইছাখালীতে ঐতিহ্যগতভাবে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। বিগত কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও শত বছরের গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। খেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধশত বলী অংশ নেন।
উপজেলার সোনাপাহাড় প্রকল্পের উদ্যোগে দোতরায় জনপ্রিয় লোকগানের সুর বাজিয়ে শোনান পায়েল ও পরাগ ভাতৃদ্বয়। বাউল গান পরিবেশন করেন হানিফ বাউল ও তার দল। বাঁশি বাজিয়ে শোনান আলমগীর কবীর।
গান পরিবেশন করেন ইকবাল হায়দার, তপন চন্দ্র বর্মণ। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন চট্টগ্রামের কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার, জিললুর রহমান, আকতার হোসেন, রিমঝিম আহমেদ, আহমেদ মুনির, সাবিনা লীনা, আখতারী ইসলাম, খালেদ হামিদী, শারদ মাজহার কামরুল হাসান বাদল।
ভিন্নমাত্রার এই বাউল উৎসব সম্বলিত নববর্ষ উদযাপনের আয়োজক আমজাদ হোসেন বলেন, বাঙালিয়ানাকে লালন করার প্রয়াস এটি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কবি পুলক পাল বলেন, যা কিছু কল্যাণকর সবই আমরা চেতনায় ধারণ করতে চাই।
মীরসরাই উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করে নকশিকাঁথা, জামা, ফতুয়া ইত্যাদির প্রদর্শনী মেলা, লাঙ্গল জোয়াল, কুলা, ঢাক ইত্যাদি নিয়ে বৈশাখী র্যালি।
বৈশাখী মেলার উদ্বোধনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, আমরা যেন আমাদের প্রাণের উৎসব এ বৈশাখে বাঙালি সংস্কৃতির সব স্মৃতি লালন করতে সক্ষম হই, এই প্রচেষ্টায় সবার জন্য শুভ কামনা।
মন্তব্য করুন